সুয়েজ খাল: বিশ্বের লাইফলাইন
সুয়েজ খাল বিশ্বের দীর্ঘতম কৃত্রিম সামুদ্রিক খাল, যা মিশরের সিনাই উপদ্বীপের পশ্চিমে অবস্থিত। এটি ভূমধ্যসাগরকে লোহিত সাগরের সাথে সংযুক্ত করে। ২০১০ সালের তথ্যানুসারে, খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৯০ কিলোমিটার, প্রস্থ ২০৫ মিটার এবং গভীরতা ২৪ মিটার। খালের উত্তর প্রান্তে পোর্ট সৈয়দ ও দক্ষিণ প্রান্তে পোর্ট সুয়েজ অবস্থিত। এটি একটি একমুখী খাল, যাতে কোনো লকগেট নেই, ফলে সমুদ্রের জল অবাধে প্রবাহিত হয়। ফরাসি প্রকৌশলী ফার্দিনান্দ দে লেসেপ্সের নেতৃত্বে ১৮৫৯ সালে এর নির্মাণ শুরু হয় এবং ১৮৬৯ সালে সম্পন্ন হওয়ার পর এটি নৌপরিবহনের জন্য উন্মুক্ত হয়। বর্তমানে খালটির মালিকানা ও পরিচালনার দায়িত্ব মিশরের সুয়েজ ক্যানাল অথরিটির উপর ন্যস্ত।
নির্মাণের উদ্দেশ্য:
ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে জলপথে যাতায়াতের জন্য পূর্বে আফ্রিকা মহাদেশ ঘুরে যেতে হত, যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল ছিল। এছাড়া উত্তমাশা অন্তরীপের বিপজ্জনক জলপথ অতিক্রম করতে হতো। কখনও কখনও পণ্য মিশরের স্থলপথে পরিবহন করা হত। সুয়েজ খাল নির্মাণের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হয়, ফলে ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে দূরত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। যেমন, কলকাতা ও লন্ডনের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ৫,৬০০ কিলোমিটার এবং মুম্বাই ও লন্ডনের মধ্যে প্রায় ৭,০০০ কিলোমিটার কমে যায়।
গুরুত্ব ও সুবিধা:
১. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য: বিশ্বের প্রায় ২০% পণ্য এই খালের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়।
২. দূরত্ব ও সময় হ্রাস: এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে যোগাযোগ সহজতর হয়েছে।
৩. শক্তি সম্পদ পরিবহন: মধ্যপ্রাচ্য ও রাশিয়ার তেল এই পথে ইউরোপে রপ্তানি হয়।
৪. কৌশলগত অবস্থান: খালটি উন্নত বন্দর ও জনবহুল অঞ্চলে অবস্থিত, যা নৌপরিবহনের জন্য সহায়ক।
অসুবিধা:
১. উচ্চ শুল্ক: এই পথে শুল্কের হার তুলনামূলকভাবে বেশি।
২. সংকীর্ণতা: বড় জাহাজ চলাচলে অসুবিধা হয়।
৩. সময়সাপেক্ষ: ১৯০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে ১০-১২ ঘণ্টা সময় লাগে।
৪. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা: অঞ্চলটির জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি নৌপরিবহনে বাধা সৃষ্টি করে।
সুয়েজ খাল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও নৌপরিবহনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
Comments
Post a Comment